৫ টি বিষয় শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাসে ফোকাস করতে হবে

বহুমুখী প্রতিভা বা হাজারও শিশুর মাঝে নানা ধরণের প্রতিভার স্ফুরণ ঘটাতে একজন শিক্ষকের ভুমিকাকে কখনোই অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ না থাকলে অনলাইনই যেনো আজকালকার ভরসার স্থল।

বর্তমানে ক্লাসরুম, ক্লাস টিচার বলতে টেবিল চেয়ার, বেঞ্চ ডেস্ক, চক ডাস্টারের প্রচলন হারাতে বসেছে। এক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসই যেনো একমাত্র ভরসা। হাতে কলমে হাতে খড়ি দিয়ে পড়ানোর সুযোগ না থাকায় এই সিস্টেমটি কিছুটা সেনসিটিভ। বিশেষ করে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারছে কিনা সেটিও দেখার বিষয়। যে ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা প্রতিটি শিক্ষকেরই অনলাইন ক্লাসে ফোকাস করতে হবে, তা আজ আমরা জানবো।

আকর্ষণীয়ভাবে ক্লাস শুরু

আকর্ষণীয়ভাবে ক্লাস শুরু করতে পারলে আপনি পুরো অনলাইন ক্লাস জুড়ে নিজের শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারবেন। বাবা মা এবং কিছু ক্ষেত্রে বাড়ির অন্যন্য সদস্যেরাও সেই আকর্ষণীয় ক্লাসের দিকে হুট করে মনোযোগ চলে যায় সেই ব্যবস্থা করতে পারলে কোনো কথাই নেই।

অনলাইন ক্লাসের হাত ধরে নতুন চ্যালেঞ্জে যেসব শিক্ষক-শিক্ষিকারা জয়ী হতে চান তারা যদি শুরুতেই আকর্ষণীয় ক্লাস নেওয়ার দিকে মনোযোগী হোন তাহলে সফলতা পেতে খুব একটা সময় লাগবে না! কথাই আছে কেউ শুরুতে ভালো তো সে শেষেও সফল! সুতরাং ক্লাসের শুরুটাকে সুন্দর এবং তার পাশাপাশি কিছুটা ইউনিক করে তুলুন।

বুদ্ধিদীপ্ত ক্লাস-লেকচার তৈরি করা

এবার আমরা জানবো অনলাইন ক্লাসকে সফল করার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ অর্থ্যাৎ বুদ্ধিদীপ্ত ক্লাস-লেকচার তৈরি করা সম্পর্কে।

দু মিনিটেই মানুষ হাঁপিয়ে না ওঠে এমন একটি বুদ্ধিদীপ্ত ক্লাস-লেকচার তৈরি করা মানেই শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করে তোলার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজকে সহজ করে তোলা। ফলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করে তুলতে হলে শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাসে বুদ্ধিদীপ্ত ক্লাস-লেকচার তৈরি করার দিকে ফোকাস করতে হবে।

শুধু অনলাইন ক্লাসেই নয়, সেই সাথে ফিজিক্যাল ক্লাসেও এদিকটা বিবেচনা রাখার দিকে ফোকাস করতে হবে।

চেষ্টা করতে হবে ক্লাসের শুরুতে কোনো আনউজ্যুয়াল শব্দ, গান বা বাজনা বা একটিভিটির আয়োজন করা যা একজন শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে উৎফুল্ল করে তুলবে। যা পরবর্তীতে পুরো ক্লাস জুড়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ বোরিং কথা বলায় ঘুমিয়ে না পড়ার পরোক্ষ ব্যবস্থা করে দিবে।

সুতরাং কোনো শিক্ষক যদি অনলাইন ক্লাসের মতো তুলনামূলক কঠিন পরিস্থিতিতেও সবচাইতে দুষ্টু বাচ্চাটির মনোযোগও এক নিমিষে পেতে চায়, তবে যেনো সেই শিক্ষক বুদ্ধিদীপ্ত ক্লাস-লেকচার তৈরি করে নেয়। কেননা বুদ্ধি বিকাশে বুদ্ধিদীপ্ত ক্লাস-লেকচার তৈরি এবং সেই লেকচারকে ইউনিক, অর্থবহ করে তুলতে পারলেই অনলাইন ক্লাস সফল হতে খুব একটা সময় নেয় না।

নাম ধরে প্রশ্ন করা

কারো মনোযোগ আকর্ষণের সবচেয়ে বড় টেকনিক হলো নাম ধরে প্রশ্ন করা। আপনি চাইলে অনলাইন ক্লাসকে সফল করতেও এই টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের কাজটি তুলনামূলক বেশ সহজ মনে হবে। শুধু মাত্র অনলাইন বলেই না এই টিপস কিন্তু অফলাইনে ক্লাস নেবার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

নাম ডাকা এবং কথা বলার সময় হাসিমুখে কথা বলতে পারার দক্ষতা শিক্ষার্থীর মনে উৎফুল্লতা সৃষ্টি করবে। এক্ষেত্রে নাম ধরে ডাকার সময় এনার্জেটিক ও এক্সাইটেড বিভিন্ন পরিস্থিতিও সৃষ্টি করা যায়। যেমন কিছুটা অবাক হওয়া কিংবা উৎসাহ প্রদান করা...! কেননা কোনো শিক্ষার্থীকে নাম ধরে ডাকার সময় এই এনার্জেটিক ও এক্সাইটেড পরিস্থিতি একটি শিক্ষার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দলগত কাজের ওপর গুরুত্ব প্রদান

দলগত কাজের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা মানেই শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন কিছু দ্রুত শেখার আগ্রহকে জাগিয়ে তোলা। নিয়মমাফিক পাঠিকা তৈরি করে সেই পাঠের বিষয়বস্তুর উপর দলগত কাজের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা গেলে প্রতিটি শিক্ষার্থীই সেই অনলাইন ক্লাস বেশ উপভোগ করবে। কেননা মূলত তাদের মাঝে দলগত কাজগুলির করার প্রতি বেশি আগ্রহ কাজ করে।

সেই সাথে একটি দলকে কিভাবে লিড দিতে হয়, কিভাবে সেই দলটিকে চালাতে হয় কিংবা কিভাবে এবং কেনো দলের নেতাকে মানতে হয় তা শিখতে হলেও অনলাইন ক্লাসে দলগত কাজের ওপর গুরুত্ব প্রদান জরুরি কাজ। অনলাইনে ক্লাস নেওয়া মোটেও সহজ কাজ না হলেও নিয়মিত নির্দিষ্ট টপিকের উপর দলগত কাজের ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে পারলে দ্রুত সেই টপিক আয়ত্ত করা সহজ হয়। ফলে কমে যায় শিক্ষকের বাড়তি পড়ানোর চাপ।

শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নেয়া

শুধু দায়িত্বই না মানবিকতাকেও গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নেয়া যেতে পারলে যেকোনো শিক্ষার্থী পড়াশোনার প্রতি আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে৷ একজন শিক্ষক হিসেবে শিশুর অসুস্থতা অনুপস্থিতি এবং ক্লাস পারফর্ময়েন্সের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ-খবর নিন।

একই সাথে বাবা মাকে বা অভিভাবককে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির বিষয়ে জানান এবং নিজেও তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। এতে করে প্রতিটি শিক্ষার্থীদের মনে লুকিয়ে থাকা শিক্ষকের প্রতি ভীতিকর মেন্টালিটিটাকে হটানো সম্ভব হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দায়িত্বে নিয়ে অনলাইন ক্লাসে যেমন উদ্যমী, প্রাণোচ্ছল ও হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন, তেমনই শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নেয়ার মাধ্যমে তাদের ভালো বন্ধু হয়ে উঠার চেষ্টা করুন।

ইতি কথা

প্রতিটি অনলাইন ক্লাসকে সফল করতে হলে উপরে উল্লিখিত এই ৫ টি বিষয় শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাসে ফোকাস করতে হবে। সেই সাথে ক্লাস নেওয়ার সময় কথা বলার স্টাইল, ব্যাকগ্রাউন্ড, বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আশা করি আপনার পরবর্তী অনলাইন ক্লাসটি হবে আরো অর্থবহ এবং সফল। হ্যাপি টিচিং!