আমরা কিভাবে অনলাইনে ক্লাস করতে পারি

করোনা ভাইরাসের ধারা সৃষ্ট কোভিড-১৯ মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করলে, জরুরী ভিত্তিতে করনা বিস্তার রোধে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সহ পৃথিবীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। সমগ্র বিশ্বের সাথে সাথে বাংলাদেশেও লকডাউনের কারণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। চরম ভাবে ক্ষতি হয় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার, শঙ্কার মুখে পরে তাদের পাঠ্যক্রম। দিনের পর দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়, শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা থেকে পিছিয়ে পরে। দেশের সরকার জরুরী ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে এবং সমাধান হিসেবে পড়াশুনার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে জোর দেয়া হয় অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি, এবং একাডেমিক কার্যক্রম অনলাইনে স্থানান্তর করা হয়। শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পেলেও অনেক শিক্ষার্থী জানে না কিভাবে আমরা অনলাইন ক্লাস করতে পারি, বিশেষ করে মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। অনলাইন ক্লাসগুলি সাধারণত ভিডিও রেকর্ডিং বা লাইভ লেকচারের একটি মিশ্রণ যা পড়া এবং মূল্যায়নের সাথে সম্পূরক হয় যা শিক্ষার্থীরা তাদের নিজের সময়ে সম্পূর্ণ করতে পারে।

অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সমূহ

অনেক শিক্ষার্থীই বিশেষ করে মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা প্রায়ই প্রশ্ন করে থাকে; আমরা অনলাইন ক্লাস কিভাবে করবো, ক্লাসে অংশ গ্রহণ করার জন্যয় কি কি উপকরণ লাগবে, কেমন ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন, ক্লাসে জয়েন করব কিভাবে, কিংবা ক্লাস লিংক ই বা কোথায় এবং কখন পাব?

অনলাইন ক্লাসে অংশ গ্রহণ কড়ার জনয় আম্মাদের কইছি ডিজিটাল ডিভাইসের প্রয়োজন হয়।এই ডিভাইস গুলোর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বা স্মার্টফোন। তবে অবশ্যই এটা নিশ্চিত করতে হবে যে এসব ডিভাইসের যেন ওয়েব ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোন ভাল হয়। তা না হলে যারা শিক্ষকরা আছেন তারা শিক্ষার্থীরা কি করছে বা আদৌ ক্লাস করছে কি না তা দেখতে পারবেন না এবং তারা শিক্ষার্থীদের প্রশ্নগুলি ও প্রতিউত্তর শুনতে পারবেন না।

সাথে প্রয়োজন ভাল ইন্টারনেট সংযোগ।  দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ হলে তা বাফারিং তৈরি করবে, বার বার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে, ক্লাসে বিঘ্ন ঘটাবে। যার ফলে  শিক্ষার্থীরা বার বার মনোযোগ হারাবে এবং ক্লাসের পাঠ্য বিষয় হতে পিছিয়ে পড়বে। তাই নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন,  WIFI কিংবা 4G ইন্টারনেট হলে খুবি ভাল।

অনলাইন ক্লাসরুম গঠন করার কৌশল

উপরে উল্লেক্ষিত বিষয় নিশ্চিত করার পরেই শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবে। পরবর্তীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মেল বন্ধনে ক্লাসরুম গঠন করতে হয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন ক্লাসরুমের গঠন কিছুটা ভিন্ন হয় এবং শিক্ষকের ভূমিকা বেশি রাখতে হয় । সাধারণত শিক্ষার্থীরা, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় নিয়মিতভাবে একটি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা LMS, একটি ভার্চুয়াল ক্লাসে লগ ইন করে যেখানে তারা সিলেবাস এবং গ্রেড দেখতে পারে; অধ্যাপক, সহপাঠী এবং অবিভাক সকলেই পড়াশুনার অগ্রগতি  নিরীক্ষণ করতে পারে।

শিক্ষকরা প্রধানত Teachmint  ক্লাসরুম ব্যবহার করে ক্লাস রুম তৈরি করেন।

এগুলোর পাশাপাশি আরও অনেক ধরনের অ্যাপস আছে যেগুলো খুব কম ব্যবহৃত হয় । তবে এই তিনটি খুবি জনপ্রিয় কারণ এদের সহজে ব্যবহার করে ভিডিও কনফারেন্স করা যায়, আন্তর্জাতিকভাবে বহুল ব্যবহৃত, পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণ করা যায়, এইগুলো ফ্রিতেই ব্যবহার করা যায় এবং এগুলো ইন্সটল বা মেন্টেইনেন্সের জন্য কোন প্রকার টাকার প্রয়োজন হয় না। এমনকি এইগুলোতে ভিডিও রেকর্ডিং ও করে রাখা যায়। যে সকল শিক্ষার্থী তাদের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেনি, কিংবা কোন কারণে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তারা খুব সহজে পরবর্তীতে সেই ক্লাস লেকচারের ভিডিওগুলি দেখে নিতে পারে এবং তাদের পাঠ্যক্রম অনায়াসেই  চালিয়ে নিতে পারে।

আমাদের বাংলাদেশে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকরা ক্লাস নেয়ার পূর্বে, বিশেষ করে আগের দিন, মোবাইলে কল করে, কিংবা ফেইসবুক গ্রুপ বা ইমেইলে ক্লাসের সময় সম্পর্কে অবহিত করেন, কোন মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস নিবেন তা জানিয়েদেন, এবং সেই মাধ্যমে ক্লাস রুম তৈরি করে তার লিঙ্ক সকলের কাছে পৌছিয়ে দেন। শিক্ষার্থীরা তাদের যে সকল ডিভাইসে, Teachmint ইন্সটল করা আছে, সেই ডিভাইস দিয়ে, ক্লাসের জন্য নির্ধারিত সময়ে সেই লিঙ্ক এ ক্লিক করলে তারা তাদের ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে।

অনলাইন ক্লাস করার জন্য কিছু নিয়ম অবশ্যই জানতে এবং মানতে হবে

অনলাইন ক্লাস করার জন্য কিছু নিয়ম না মানলে শিক্ষার্থীরা সব কইছি থাকার পরও ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাদের জ্ঞাতার্থে নিচে এই বিষয় গুলি উল্লেখ করা হলঃ

১। যে ডিভাইসের মাধ্যমে তারা ক্লাসে প্রবেশ করবে, অবশ্যই তাতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকা বাধ্যতামূলক।

২। অনলাইন ক্লাসের লিঙ্ক সংগ্রহ করতে হবে, সেই সাথে ক্লাসের আইডি ও পাসওয়ার্ড সংগ্রহে রাখতে হবে। তা না হলে তারা ক্লাসে ঢুকতে পারবে না।

৩। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্লাস করলে অবশ্যই সঠিক ক্লাস লিংক ব্রাউজারে বসিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করতে হবে।

৪। ওয়েব ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, স্ক্রিন শেয়ার, মেসেজ অপশন ঠিক কাজ করছে কিনা দেখে নেয় উত্তম; এতে পরবর্তীতে সমস্যায় পরতে হবেনা।

পরিশেষে, আমাদের সকলের মনে রাখা উচিত, আমরা করোনা মহামারীর কারণে এখন খুবি কঠিন সময় পার করছি। সুধু পড়াশুনা নয় দেশের অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমই ব্যহত হচ্ছে। সরকার সকল বিষয়ের সকল সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় অনলাইন ক্লাস চালু করেছে। আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অবিভাবক, এবং সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত এই বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করা এবং অনলাইন ক্লাস বাংলাদেশ সফল করা।