অনলাইন ক্লাস আরও আকর্ষণীয় করার ট্রিপস এন্ড ট্রিকস

বর্তমানে নতুন চ্যালেঞ্জে রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকারা। যার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো অনলাইন ক্লাস। সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ না থাকায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা কাজ করছে এই মাধ্যমটিতে। এক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস আরও আকর্ষণীয় করার ট্রিপস এন্ড ট্রিকস না জানার কারণে শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ ছাত্র-ছাত্রীরাও পড়ছে বিভিন্ন জটিলতায়।

আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো অনলাইন ক্লাস কে আকর্ষণীয় করার ট্রিপস এন্ড ট্রিকস সম্পর্কে। যা আমাদের দেশের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইন পড়াশোনাকে আরো গতিশীল করবে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ

যোগাযোগ করে মনের কথা শোনানোর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সবসময়ই আগ্রহী। শিশু-কিশোরদের মনে যে কৌতূহল কাজ করে তার একমাত্র সমাধান হলো যোগাযোগ করা এবং মনের কথা শেয়ার করা। কিন্তু অনলাইন ক্লাসে তা মোটামুটি কিছু সম্ভবের বাইরে কিংবা জটিল কর্মকান্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে দ্রুত বা অতি ধীরে ক্লাস পরিচালনা করাটা একেবারেই অযৌক্তিক। এতে করে যেমন পড়ানোর তাল-লয় নষ্ট হয়, তেমনই তা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নিবিড় যোগাযোগ ব্যহত করে।

একজন শিক্ষক যখন অনলাইন ক্লাসে অতিদ্রুত পাঠ্যকর্ম চালিয়ে যান তখন ক্লাসে থাকা শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে না যে কি পড়ানো হচ্ছে কিংবা কি কি প্রশ্ন করা উচিত। এতে করে মনের ভেতর থেকে উঠে আসা বিভিন্ন প্রশ্নকে কেবলমাত্র আনইজি ফিল করার জন্যই গলা টিপে মেরে ফেলছে শিক্ষার্থীরা। ফলে না পারছে নতুন কিছু শিখতে...না পারছে শিক্ষকের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করতে।

আবার একজন শিক্ষক হিসেবে আপনি যখন অনলাইন ক্লাসে খুব ধীরে ধীরে পড়ানোর কাজটি সারেন তখন ক্লাস করা শিক্ষার্থীরা বিরক্ত বা অন্য মনস্ক হয়ে পড়ার মূল পয়েন্ট থেকে দূরে সরে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় বিস্তর ফারাগের।

প্রযুক্তির কল্যাণে আপনি যখন ঘরে বসেই শিক্ষার্থীর কাছে কৃত্রিমভাবে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করছেন, তখন এই ধীরগতির ক্লাস নেওয়ার ঘটনাটিও আপনাকে বেশ পিছিয়ে দিতে পারে। সুতরাং ক্লাসের মতো করে ক্লাস নিতে হবে। সময়ের দিকে বিবেচনা করে পড়ার ধরণকে ঠিকঠাকমতো গুছিয়ে নিতে হবে। একটি টপিক কতটুকু সময় ধরে শিক্ষার্থীদের বুঝানো যায় তা আগে থেকেই রিসার্চ করে নিতে হবে।

উৎসাহী থাকুন এবং উৎসাহিত করুন

অনলাইন ক্লাস করার সময় একজন শিক্ষক হিসেবে ক্লাস করাতে নিজেকে যেমন উৎসাহী রাখতে হবে। তেমনই শিক্ষার্থীদেরও উৎসাহী করার মতো টেকনিক সম্পর্কে জানতে হবে। এতে করে প্রতিটি অনলাইন ক্লাস আগের চাইতে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

যেহেতু শিশুরা সব সময় বড়দের ফলো করতে পছন্দ করে সেহেতু আপনিও অনলাইন ক্লাস করার ক্ষেত্রে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেন। শিশুকে পড়াশোনার প্রতি আরও বেশি উৎসাহিত করে তুলতে এক্ষেত্রে আপনি এমনকিছু স্টেপ নিতে পারেন যা শিক্ষার্থীরা ফলো করবে এবং সেই ফলো করার কারণে তারা নতুন কিছু শিখে তা প্রয়োগ করতে পারবে।

যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের চ্যাট বক্সে আপনি চাইলে মাঝেমধ্যে তাদের পড়াশোনার খোঁজ খবর নিতে পারেন। এক্ষেত্রে গ্রুপগুলির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে আমি মনে করি। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী একসাথে অনেককিছুই জানতে পারে, যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ে, নেতৃত্বের মতো গুণগুলি আরো সক্রিয় হয়ে উঠে। চ্যাটিং করার সময় মাঝেমধ্যে বিভিন্ন হাসিখুশি ইমুজিও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে...এই ইমুজি ব্যবহারের পরিমাণ যেনো বেশি হয়ে না যায়।

শিক্ষার্থীকে সব সময় উৎসাহিত করতে গিয়ে নিয়মিত তাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করুন। তাদের এটি ভাবতে বাধ্য করুন যে আপনি ভার্চ্যুয়ালি হলেও তাদের কথা ভাবছেন এবং তাদের পাশে থেকে সাহস জোগানোর পাশাপাশি উৎসাহিতও করছেন। মাঝেমধ্যে তাদের অনেক খুশি করানোর জন্য প্রশংসা করা যেতে পারে।

শিক্ষার্থীদের উন্নতির ওপর নজর রাখুন

শিক্ষার্থীরা নিজেদের কতটুকু উন্নত করতে পারছে তার দিকে নজর দিন। কেননা অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উন্নতিই হলো প্রধান উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত খেয়াল রাখার মন-মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। অনলাইন ক্লাসে তারা কতটা শিখতে পারছে তার উপর নির্ভর করে পড়াশোনার রুটিনে কিছুটা নতুনত্ব আনুন। যাতে তারা দ্রুত আরো একটি দিক দিয়ে এগিয়ে থাকে।

শিক্ষার্থীদের বারবার ভুলভ্রান্তি মনে না করিয়ে দিয়ে তাদের ডেভেলপমেন্টগুলিকেও মাঝেমধ্যে ফোকাস করুন। বোঝান যে তারা চাইলে আরো দ্রুত এবং ডেভেলপমেন্ট নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারে। নেগেটিভভাবে নিজেকে তাদের কাছে উপস্থাপন না করে পজিটিভলি তাদের ডেভেলপমেন্টকে পুঁজি করে মেন্টালি পড়াশোনার দিকে স্ট্রং করে তুলুন।

প্রয়োজনে অভিভাবকদের সহায়তা

অনলাইন ক্লাসকে আরো সফল করতে চাইলে আপনি প্রয়োজনে অভিভাবকদের সহায়তা নিতে পারেন। কেননা একজন শিক্ষার্থী দিনের বেশিরভাগ সময় তার অবিভাবকের সাথেই কাটিয়ে ফেলে। সুতরাং এক্ষেত্রে যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সহায়তা নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি। একজন অবিভাবক চাইলেই তার সন্তানের প্রতিটি অনলাইন ক্লাসকে অর্থবহ করে তুলতে পারে।

নিয়মিত অবিভাবদের অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে ব্রিফ করাতে পারলে ব্যাপারটা আরো দ্রুত কার্যকর হতো। কেননা একটি শিক্ষার্থীকে একজন শিক্ষক যতটা না কন্ট্রোল করতে পারে; একজন অবিভাবক একটি সন্তানের উপর তার চাইতে বেশি প্রভাব খাটাতে পারে। সুতরাং অনলাইন ক্লাসকে সফল করতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রয়োজনে অবিভাবকের সাহায্য নিতে হবে।

ইতি কথা

সময়টা ডিজিটাল। আপনাকেও এটি মেনে অনলাইন ক্লাসকে সফল করার দিকে ফোকাস দিতে হবে। পাশাপাশি করোনা মহামারীর প্রভাব তো আছেই! তাই ছাত্র-শিক্ষক মিলে মিশে একসাথে অনলাইন ক্লাসকে আরো কার্যকর ও সময় উপযোগী করতে হবে।