অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখার কিছু চমৎকার কৌশল

করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ আছে, তাই শিক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাস নেয়ার কোন সুযোগ নেই। অনলাইন ক্লাসই সিলেবাস শেষ করার একমাত্র উপায়। কিন্তু, এটাও সত্য যেখানে সরাসরি শ্রেণী কক্ষেই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা যায় না, ভার্চুয়াল ক্লাসে তো তা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কেননা এখানে শিক্ষকরা সরাসরি ছাত্রছাত্রীদের তদারকি করতে পারেন না; পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও খুব সহজে ফাঁকি দেয়ার উপায় বের করতে পারে।  আর এই বিষয় নিয়েই শিক্ষকরা বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন, বিশেষ করে মাধ্যমিক অনলাইন ক্লাস। কারণ মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা আরো বেশি দুরন্ত হয়ে থাকে।

প্রতিটি শিক্ষক একটি শেখার পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেন যা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে এবং উৎসাহিত করে। অনেক শিক্ষাবিদদের কাছে প্রশ্ন হল ভার্চুয়াল ক্লাসে কীভাবে এটি সম্পন্ন করা যায়, যেখানে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখা, অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের সনাক্ত করা এবং সেই অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগ ফিরিয়ে আনা একটি কঠিন সাধ্য ব্যাপার।

সৌভাগ্যবশত, ভার্চুয়াল শ্রেণীকক্ষের জন্য ছাত্রছাত্রী-কেন্দ্রিক কৌশল প্রয়োগ করে কীভাবে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় তা শিক্ষাবিদরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনলাইন শিক্ষার পরিবেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য, শিক্ষাবিদরা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ এবং বজায় রাখার জন্য মূল কৌশলগুলি স্থাপন করতে পারেন। সক্রিয় ভূমিকা না থাকলে ছাত্রছাত্রীরা সহজেই আগ্রহ হারাতে পারে এবং বিরক্ত হয়ে যেতে পারে। তাই অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকদের সর্বদা মনে রাখা  উচিত যে তারা শিক্ষার্থীদের  অবস্থান থেকে শারীরিক ভাবে দূরে অবস্থান করছেন। ডিজিটাল লার্নিং শিক্ষকদের তাদের শ্রেণীকক্ষকে ছাত্র-কেন্দ্রিক রাখার জন্য অনেক উপায় বের করেছে ।অনলাইন ক্লাস আরো মনোযোগী করার কিছু কৌশল সম্পর্কে আজ আমরা জানব।

ক্লাসে আলোচনা এবং অন্যান্য ইন্টারেক্টিভ শেখার সুযোগ অন্তর্ভুক্ত করা

শ্রেণীকক্ষের আলোচনা শিক্ষার্থীদের তাদের শেখার আগ্রহ তৈরি করতে সাহায্য করে।এই মৌখিক আদান-প্রদানগুলি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের আরও সম্পূর্ণরূপে তথ্য অন্বেষণ এবং প্রক্রিয়া করার সুযোগ দেয় না, তারা তাদের সমবয়সীদের সাথে জ্ঞান ভাগ করার সুযোগও দেয়।বেশ কিছু প্রযুক্তি বিদ্যমান যা ভার্চুয়াল ক্লাসে আলোচনাকে উৎসাহিত করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভিডিও কনফারেন্স - এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একে অপরকে সরাসরি দেখতে পারে এবং তদের পঠিত বিষয় সম্পর্কে সবার সাথে সরাসরি মতবিনিময় করতে পারে। যা তাদের ক্লাসের মনোযোগ সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।

পোলিং বা ভোটপ্রদান – প্রায় সময়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ  পড়া নিয়ে আলোচনা জমে উঠে, এবং বিভিন্ন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে ও তাদের মতামত দেয়। অনেক ভার্চুয়াল ক্লাস প্রোভাইডররা অংশগ্রহণকারীদের স্ক্রিনে প্রদর্শিত প্রশ্নগুলি উত্থাপন করার অনুমতি দেয়। এই প্রশ্নগুলি মতামত পরিমাপ করতে পারে বা বোঝার মূল্যায়ন করার জন্য শিক্ষকরা কথোপকথন শুরু করতে বা শিক্ষার্থীদের শেখার এবং আগ্রহের বিষয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া পেতে কৌশলগতভাবে এই পোলিং বা ভোটপ্রদান বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করতে পারেন।এতে করে শিক্ষার্থীরা আনন্দ পাওয়ার সাথে সাথে মনোযোগীও হবে। আর অনলাইন ক্লাসের সকল সুবিধা এক সাথে প্রদান করছে Teachmint অ্যাপ।

জবাবদিহিতার উপর জোর দেয়া

অনলাইন ক্লাসে কীভাবে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় তা নির্ধারণ করার মধ্যে শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য দায়বদ্ধ রাখার উপায়গুলি মূল্যায়ন করা জরুরি।দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের দৈনিক কিছু কাজ দিতে পারেন। ছাত্রছাত্রীরা তাদের জবাব্দিদিতার জায়গা থেকে সে কাজগুলো সম্পন্ন করবে।

যেমন, শিক্ষকরা স্পষ্ট লক্ষ নির্ধারণ করে ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে অংশগ্রহণ করবেন এবং সার্বক্ষণিক শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে সিলেবাস শেষ করবেন। উদাহরণ স্বরূপ, শিক্ষকরা নির্দেশিকা তৈরি করতে পারেন যার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিটি ক্লাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক লিখিত বা মৌখিক বিষয়ে পড়া দিতে বাধ্য থাকবে। শিক্ষকরা যখন ছাত্রছাত্রীদের বাড়ির কাজ বা অন্য কোন বিষয়ে পড়া দিবেন অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবেঃ

  • একটি নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের বাড়ির কাজ সম্পন্ন করে জামা দিবে।
  • শিক্ষার্থীদের কি কাজ দেয়া হয়েছে এবং সে কাজ সম্পন্ন করতে কি শর্ত দেয়া হয়েছে সে  বিষয়ে তাদের পরিষ্কার ধারণা দেয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ,শ্রেণীকক্ষে কয়েকটি গ্রুপ তৈরি করা, এবং প্রতিটি গ্রুপকে তাদের কজগুলো ভাগ করে দেয়া।
  • যে মাধ্যমে তারা তাদের কাজকে উপস্থাপন করতে চায় তা নির্ধারণ করে দেয়া। উদাহরণস্বরূপ, প্রত্যেক ছাত্রকে অবশ্যই প্ল্যাটফর্মে তাদের কাজ শেয়ার করতে হবে যাতে সবাই দেখতে পারে।

শিক্ষকরা বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রের সুবিধা নিতে পারেন যেমন কুইজ অ্যাপ্লিকেশন যা তাদের শিক্ষার্থীদের শেখার মানকে পরিমাপ করতে এবং অনলাইন ক্লাসে পড়াশুনার সময় শিক্ষার্থীদের মনোযোগী রাখতে সাহায্য করে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ভাল সম্পর্ক তৈরি করা

শিক্ষকের সাথে যদি শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বন্ধুসুল্ভ বা ভালো না হয় তাহলে, ছাত্রছাত্রীরা ঐ শিক্ষকের ক্লাস করে আনন্দ পাবে না এবং সহজেই মনোযোগ হারাবে। তাই অবশ্যই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বোঝাপড়া এমন হতে হবে যেন, তারা শিক্ষকের ক্লাস করতে আগ্রহ বোধ করে। শিক্ষকের কথা বলার ধরণ, বোঝানোর কৌশল আনন্দদায়ক হইয়া উচিত; যাতে করে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে প্রানোজ্জল এবং মনোযোগী থাকে।

পরিশেষে,

শিক্ষকদের আধুনিক পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার, দায়িত্বশীলতা, এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গি পারে ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন ক্লাস আরো চমকপ্রদ ও মনোযোগী করতে। ইন্টারনেটের এই যুগে, শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারে। ভার্চুয়াল ক্লাস, এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অবিভাবক মেলবন্ধনই কেবল শিক্ষার্থীদের মনোযোগ পড়াশুনায় ধরে রাখতে সক্ষম।