অনলাইন শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা

কোভিড-১৯ মহামারীর ব্যাপকতার কারণে অনলাইন শিক্ষা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মূলত অনলাইন শিক্ষার সুযোগ সুবিধার কারনেই এই ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আজকে আমরা, অনলাইন শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত জানব।

১. সময় মত শিক্ষা লাভ:

করোনা মহামারী সমাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে স্বশরীরে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ অসম্ভব। এসময় বিকল্প ব্যবস্হা হিসেবে কার্করী ভূৃমিকা পালন করেছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সুযোগও সময় মতো যেকোনো স্হান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে ক্লাসে অংশ গ্রহণ করতে পারে। পাঠ্য কার্যক্রম শেষে রের্কডকৃত ক্লাস লেকচার সোস্যাল মিডিয়া যেমন ইউটিউব, ফেসবুক গ্রুপ বা ড্রাইভে সংরক্ষণ করতে পারে। এতে যেকোন শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্হিত না থেকেও পরবর্তী সুবিধাজনক সময়ে শ্রেনি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে।

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের কারণে হাজারো শিক্ষার্থী সময় মতো শিক্ষা লাভ করতে পারছে। লকডাউনের কারণে শিক্ষা জীবন থেকে ছিটকে বা পিছিয়ে যাওয়ার প্রবনতা হ্রাস পেয়েছে।

২. সময়ের অপচয় রোধ:

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে সময়ে সঠিক ব্যবহার সুষম ভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব। শিক্ষক-শিক্ষার্থী কিংবা কর্মচারীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানে আসতে হয় না। এতে সকলে। মূল্যবান সময় অপচয় রোধ হয়।

তাছাড়া ঘরে বসে ক্লাস করতে পারে বলে, উদ্ভৃত্ত সময় অতিরিক্ত পড়া সহ, অন্যান্য কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিতে সময় দিতে পারে।

৩. যেকোনো স্থান থেকে পড়াশোনার সুবিধা:

অনলাইনে ক্লাস করার জন্য সুনিদিষ্ট কোন স্হানে উপস্হিত বা সুনিদিষ্ট ক্লাস রুমে উপস্হিত থাকার প্রয়োজন নেই। পৃথিবীর যেকেন স্হানে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে পাঠ্যক্রম অংশ নিতে পারে।

ফলে ভূগৌলিক বাধা পেরিয়ে অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে দূরদুরান্তে বসে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয়া সম্ভব।

নিদির্ষ্ট সময়ে অনলাইন ক্লাসে উপস্হিত না থাকলেও প্রযুক্তির কল্যানে ক্লাস নোট, রের্কড, ভিডিও লেকাচার আকারে সংরক্ষণ করা সম্ভব। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্হায় একদিন ক্লাসে উপস্হিত না হয়ে ঐ লেকচার আর বোঝার সুযোগ থাকে না। কিন্তু অনলাইন ক্লাসের লেকচার বিভিন্ন মিডিয়ামে সংরক্ষিত থাকে বিধায় যেকন স্হান থেকে যেকোন সময়ে পড়াশোনা করার সুবিধা পাওয়া যায়।

৪. অনলাইন শিক্ষা সরাসরি শিক্ষার চেয়েও ফলপ্রসু:

অনলাইন শিক্ষা অনেকক্ষেত্রে সরাসরি শিক্ষার থেকেও অনেক বেশি ফলপ্রসু। কোন কারণে একজন শিক্ষার্থী অনুপস্হিত থাকলে সেটি স্বশরীরে ক্লাসে আর মেকওভার করা সম্ভব নয়।

কারণ একটি ক্লাস শেষ করার পর ঐ ক্লাসটির লেকচার সমূহ সংরক্ষন সম্ভব নয়। কিন্তু অনলাইন ক্লাসে সেটি অনায়াসে রের্কডিং এর মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যায়। যেটি পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থী রিভিউ করে ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারে।

অনেকসময় অফলাইন ক্লাসে অনেক ভিডিও দেখানো, ডায়াগ্রাম বোর্ডে একে বোঝানোর সুযোগ ও সময় হয়ে উঠে না কিন্তু অনলাইন ক্লাসে যেকোম টপিকের উপর লক্ষাধিক সোর্স থেকে যেকোন ইনফরমেশান, ইমেজ, ভিডিও নিমেষে এক ক্লিকে প্রদর্শন সম্ভব। এসব ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্হা থেকে লক্ষাধিক গুণে গুনান্বিত ও ফলপ্রসু।

৫. ব্যাপক অর্থ সাশ্রয়:

স্বশরীরে ক্লাস অংশগ্রহণ ও পরিচালনায় যে পরিমাণ অর্থ খরচ সেটির তুলনায় নলাইন ক্লাসের জন্য খরচের পরিমাণ নগণ্য।

শুধুমাত্র নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও যথাপোযুক্ত ডিভাইসের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করা সম্ভব। ফলে শিক্ষক ও ছাত্রদের লজিস্টিক ও যাতায়াত খরচ সাশ্রয় হয়। অনেকক্ষেত্রে দেশে বসেই বিদেশে অর্থ সাশ্রয় করে উচ্চত্তর ডিগ্রি অর্জন করা সম্ভব।

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক কম জনবল দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব। ফলে প্রতিষ্ঠানের বাড়ি ভাড়া, ম্যানটেইন্স কস্ট, শিক্ষা সামগ্রী খরচ সহ অন্যান্য লজিস্টিক খরচ বাচানোর মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ সাশ্রয় সম্ভব।

৬. তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সফল প্রয়োগ:

অনলাইন শিক্ষার মূল ভিত্তিই হলো তথ্য প্রযুক্তি ও তার উৎকর্ষ উন্নয়ন, সফল ব্যবহার। একটি অনলাইন ক্লাস পরিচালনায় তথ্য প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য।

ডিভাইস থেকে শুরু করে ডাটা, হার্ডওয়্যার থেকে শুরু সফটওয়্যার সব কিছুতে রয়েছে প্রযুক্তির ছোয়া। করোনাকালে অনলাইন শিক্ষার ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলশ্রুতি তথ্যপ্রযুক্তির ও ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, অনলাইন ক্লাসকে আরো সুনিপুণ ভাবে পরিচালনার জন্য। এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সমান্তরালে সাথে সাথে প্রযুক্তি সফল প্রয়োগ ও ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রয়েছে।

৭. জীবনমূখী দক্ষতা অর্জন:

আগে শ্রেণীকক্ষে শুধুমাত্র নিদির্ষ্ট গন্ডির মধ্যে থেকে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কিন্তু বর্তমান তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্হার আমূল পরিবর্তন, গড়পত্তা নিয়মের উদ্ধে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে যেকেউ যেকোন বিশেষায়িত বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে। এক্ষেত্রে ভূগৌলিক দুরুত্ব বা অন্য কোন প্রতিবন্ধতা থাকে না। যেকোন স্হান থেকে যেকেউ যেকোন জীবনমূখী বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

৮. শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ:

অনলাইন নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্হা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিত্য-নতুন বিষয়ে জানার আগ্রহ সৃষ্টি প্রভাবক হিসেবে কাজ করে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্হা।

প্রতিনিয়ত, বিশ্বের নানামুখী অগ্রযাত্রার আপডেট শিক্ষার্থীদেী আবিষ্কারের মানসিকতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গঠনমূলক ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতেও মূখ্য ভূমিকা পালন করছে বর্তমানের অনলাইন নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্হা।