২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এর পর থেকে ক্রমান্বয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশ হয়ে সংক্রমণ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে ১১ মার্চ ২০২০ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর থেকেই করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে দেশগুলো তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সকল প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লকডাউনে বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা, যা প্রায় ৫৯ সপ্তাহ বন্ধ ছিল। এর মধ্যে সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধারাবাহিক রাখতে অনলাইন শিক্ষা বাংলাদেশ চালু করে। সরকারের গৃহীত এই উদ্যোগের কারণে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এবং গতিশীলতা আসে।
দেশের শিক্ষার্থীদের এই আকস্মিকভাবে শ্রেণীকক্ষ থেকে দূরে সরে যাওয়ায়, কেউ কেউ ভেবেছেন যে অনলাইন শিক্ষা গ্রহণ করা মহামারী পরবর্তী অব্যাহত থাকবে কিনা এবং এই ধরনের পরিবর্তন দেশের শিক্ষা বাবস্থায় কীভাবে প্রভাব ফেলবে।পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণ কমে আসলে দীর্ঘ সময় পর দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়। কিন্তু পর মুহূর্তেই আবার করোনা নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের তাণ্ডব শুরু হয় বিশ্বব্যাপী। যার ফলে পুনরায় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়, শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে স্থানান্তর করা হয়।বর্তমান সময়ে শিক্ষার প্রসার এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অনলাইন ক্লাসের বিকল্প আর কোন উপায় নেই। আর অনলাইন ক্লাসের জন্য সর্বোত্তম মাধ্যম Teachmint.
মহামারীর অচলাবস্থায় অনলাইন শিক্ষার তাৎপর্য
দেশের অনেকেই ভেবেছিলেন যে অনলাইন শিক্ষা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দুরবস্থা দূর করতে পারবে কি না! কিংবা শিক্ষার্থীরাই বা এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে কি না!
এই সকল সব কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম প্রমাণ করেছে যে, সরাসরি শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত না থেকেও ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনা ঠিকভাবে চালিয়ে নেয়া যায়।দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় এই অচলাবস্থায় তাদের সকল পাঠদান অনলাইনেই চালিয়ে নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের কোর্সগুলো অনলাইনেই সম্পন্ন করা হয়েছে। শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি নিয়েছেন এবং তাদের এসাইনমেন্ট অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমেই প্রদান করেছেন।
শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথেই ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছে এবং তারা অনলাইনেই তাদের এসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে ইমেইলের মাধ্যমে। তাদের দৈনিক একাডেমিক কাজে বিন্দুমাত্র বাধা আসেনি, এমন কি তাদের ক্লাসে অংশগ্রহণ করার জন্য বিন্দু মাত্র সময় অপচয় করতে হয় নি। যে, যে অবস্থানে ছিল সে অবস্থানে থেকেই নিজ নিজ ক্লাসে উপস্থিত হয়েছে। এমন কি বাংলেদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলিও অনলাইনেই নিয়ে সেমিস্টার শেষ করেছে। যেটা অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার খুবি উত্তম দিক, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা করোনা মহামারীর মধ্যে নিজ নিজ অবস্থানে নিরাপদে থেকে তাদের সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ করে, পরবর্তী সেমিস্টারের জন্য ক্লাস করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি দেশের কলেজগুলোও তাদের সিলেবাস অনলাইন ক্লাসের উপযোগী করে তৈরি করেছে, যেখানে তাদের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী দৈনিক ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করা হয় ,এবং তাদের ইয়ার ফাইনাল বা বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়।তাছাড়া আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকেও এখন খুবি ভাল করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে, যেখানে তারা নিজ ঘরে অবস্থান করেই সহজে তাদের পাঠ্যপুস্তক গুলোকে ভালকে আয়ত্ত করতে পারছে। ক্লাসের উপস্থিতির পারশাপাশি তারা তাদের এসাইনমেন্ট গুলিও পেয়ে যাচ্ছে। এতে করে তাদের পড়াশুনায় কোন বাধা আসছে না বা থেমে থাকছে না। প্রাথমিক পর্যায়ের ক্লাসগুলি অনেক আগেই টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে, যাতে করে শিশুরা নিজ ঘরে বসেই তাদের শ্রেণী কার্যক্রম করতে পারে।
এখান থেকে আমরা একটা বিষয় খুব ভাল করে অনুধাবন করতে পারি যে, মহামারীতে কিংবা যে কোন পরিস্থিতিতেই আমরা আমাদের অনলাইন ক্লাস বাংলাদেশ এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অনলাইন ক্লাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের উৎসাহিত করা উচিত
আমদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ সময় যাবত বন্ধ আছে, তা কবে নাগাদ আবার খুলবে এবং স্বশরীরে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হতে পারবে তার কোন কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এই কঠিন মুহূর্তে ছাত্রছাত্রীদের তাদের একাডেমিক বিষয় গুলোতে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য অনলাইন ক্লাসের বিকল্প আর কিছুই নেই। তাই অবশ্যই আমরা যারা শিক্ষক এবং অবিভাবক আছি, তারা এই অনলাইন ক্লাসের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি কিছু বিষয় অবশ্যই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে;
১। শিক্ষার্থী ক্লাসের সময় এবং ক্লাসের পাঠ্য বিষয় সম্পর্কে অবগত আছে কি না!
২। নিয়মিত তার অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে কিনা এবং তার পড়া বুঝতে পাড়ছে কিনা!
৩। শিক্ষার্থী তার এসাইনমেন্ট পেয়েছে কিনা, এবং তা কিভাবে সম্পন্ন করে জামা দিতে হবে সে বিষয়ে তাকে অবহিত করা।
৪। তার দুর্বলতা গুলোকে চিহ্নত করা এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া।
৫। অনলাইন ক্লাস করে তার উন্নতির দিকগুলোর প্রতি শিক্ষক এবং অবিভাবক উভয়েই লক্ষ রাখা।
পরিশেষে,
বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্ব এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়েনি, এভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাও থমকে দাঁড়ায়নি। এই অবস্থায় অনলাইন শিক্ষা একটি নতুন প্লাটফর্ম তৈরি করেছে শিক্ষার অচলাবস্থা দূর করতে। প্রথমবারে ভাল সাড়া জাগিছে এবং সফলতা অর্জন করেছে। তাই আমরা বলতেই পারি, অনলাইন শিক্ষা বাংলাদেশ কার্যক্রম ব্যাখ্যাতিত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে শিক্ষার প্রসারে ।আমাদের সকলের উচিত কর্তৃপক্ষের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানানো এবং উৎসাহিত করা।