বর্তমানে অনলাইন পড়াশোনা করার সুবিধাগুলি কি কি?

অনলাইন ক্লাস, অনলাইনে পড়াশোনা; ব্যাপারগুলির সাথে আজকাল আমাদের শিক্ষার্থীরা বেশ পরিচিত। যদিও অনেকের কাছেও এটি বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। কেননা সাধারণ শ্রেণি শিক্ষা থেকে অনলাইন পড়াশোনা তুলনামূলক ব্যতিক্রম হওয়ায় অনেকেই এর নেতিবাচক দিক নিয়ে চিন্তা করেন। ফলে ইতিবাচক দিকগুলিকে কখনোই চোখে পড়ে না। তবে আজ আমরা এমন কিছু অনলাইন পড়াশোনা সম্পর্কিত সুবিধাদি নিয়ে আলোচনা করবো যা একজন অবিভাবক, শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীর জেনে রাখা উচিত।

অনলাইন পড়াশোনা করার সুবিধাগুলি হলোঃ

ক। খরচ কমানো

অনলাইন পড়াশোনার সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি ব্যাক্তিরই খরচ কমানোর একটি ব্যাপার কাজ করে। কেননা অনলাইন পড়াশোনা করতে গিয়ে অর্থের অপচয়ও অনেকটা কমে আসে। যেসব শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অবিভাবকেরা প্রাতিষ্ঠানিক মেইনটেন্যান্স খরচ, বাড়ি ভাড়ার খরচ ও শিক্ষা সামগ্রীর খরচ থেকে মুক্তি চায় কিংবা বাড়তি খরচের বিপক্ষে তাদের জন্য অনলাইন পড়াশোনা সবচেয়ে বড় সুবিধা হিসেবে কাজ করে থাকে।

ডিজিটাল যুগ হিসেবে বাংলাদেশের মতো দেশেও ইন্টারনেট সংযোগ বাবদ খুব একটা বেশি অর্থ খরচ হয় না। এক্ষেত্রে যাও খরচ হয় তা অন্যান্য দিক থেকে খরচ বাঁচানোর তুলনায় কাটাকাটি করলে দেখা যাবে অনলাইন পড়াশোনা খরচ বাঁচানোে দিক দিয়ে আরো বেশি সুবিধা দিয়ে থাকে।

খ। করোনা ঝুঁকি কমানো

করোনার এই সংকটময় সময়টিই অনলাইন পড়াশোনাকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে। সুতরাং অনলাইন পড়াশোনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো এই করোনা ঝুঁকি কমানো। ঘরে বসে অনলাইনে অফলাইনের মতোই ক্লাস করতে পারার ফলে একদিকে যেমন পড়াশোনার গতির কোনো ক্ষতি হচ্ছে না তেমনই করোনার মতো ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকিকেও রোধ করা সম্ভব হচ্ছে।

অনলাইন ক্লাসে পড়াশোনা করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে যেহেতু কনভেনশনাল/ট্রাডিশনাল অ্যাকাডেমিক ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত হতে হচ্ছে না সেহেতু করোনা ছড়ানোর ঝুঁকিও থাকছে না। কোনো অবিভাবকই চাইবেন না তার সন্তান করোনার ঝুঁকির মাঝে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাক। কিন্তু অনলাইন পড়াশোনার ব্যাপারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠার পর থেকেই করোনা ঝুঁকি কমার পাশাপাশি পড়াশোনার গতিও যথাযথভাবে বজায় থাকছে।

গ। শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা

শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়াশোনার গতি বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতকে গতিময়তা দান করতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা আবশ্যক। কিন্তু বাঁধ সাধে করোনাকালীন সময়। যেখানে জীবন নিয়ে নিশ্চয়তা নেই সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকার ব্যাপারটি যেনো অনেকাংশেই ফিকে। কিন্তু অনলাইন পড়াশোনার ব্যাপারটি এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আশংকা কমেছে।

বর্তমানে পড়াশোনার করার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের একমাত্র প্রধান উপায় হিসেবে অনলাইন পড়াশোনা জনপ্রিয় হয়ে উঠায় শিক্ষা কার্যক্রম ঠিক আগের মতোই চলছে। মাঝখানে পড়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষার্থী নিজেদের প্রযুক্তির সাথে ইতিবাচকভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করছে।

ঘ। একসাথে ক্লাস করতে পারা

শিক্ষার্থীরা সবসময় একসাথে ক্লাস করে আসছে বলে একসাথে ক্লাস করতে করতে নতুন পড়াটা রপ্ত করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর এই অভ্যাসের পরিবর্তন তাদের পড়াশোনার গতিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু অনলাইনে পড়াশোনার ব্যাপারটি এই একসাথে ক্লাস করতে পারার বিষয়টির দিকেও শিক্ষার্থীদের সুবিধা দিয়েছে।

আজকাল বিভিন্ন সফটওয়্যার কিংবা মিডিয়া শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের এই একসাথে ক্লাস করতে পারার ব্যাপারটি নিশ্চিত করছে। একসাথে অনেকজনকে একই মিটিং কলে রাখতে পারার ফলে অনলাইন ক্লাসে থাকছে সেই পুরোনো একসাথে ক্লাস করতে পারার আনন্দ।

ঙ। আলাদা মনোযোগ লাভ

যেহেতু অনলাইন পড়াশোনাটা ঘরে বসেই করা হয় সেহেতু শিক্ষার্থীরা আলাদা মনোযোগ লাভে সক্ষম হচ্ছে। যানযট কিংবা জার্নির মতো ধকল সামলাতে হচ্ছে না বলে পড়াশোনায় দেখা যাচ্ছে বাড়তি মনোযোগ। সেই সাথে শিক্ষকেরাও ঘরে বসেই নিজের লেকচার রেডি করে নিজের মতো করে ক্লাস নিতে পারছে।

পড়াশোনার মতো বিষয়গুলিতে আলাদা মনোযোগ লাভের ক্ষেত্রে সুস্থ পরিবেশ থাকা আবশ্যক। যা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে। নিজের গৃহের মতো সুন্দর পরিবেশে অনলাইন পড়াশোনা হয়ে উঠছে তাদের এগিয়ে চলার যৌক্তিক পথ।

চ। কমফোর্টে জোনে ক্লাস করা

একজন শিক্ষার্থীর কমফোর্টে জোনে ক্লাস করা নিশ্চিত করা মানেই তাকে পড়াশোনায় আরো মনোযোগী করে তোলা। নিজের পছন্দের যেকোনো স্থান থেকে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ই বেশ খুশি।

সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস লেকচার এক মিনিটেই কপি করার মতো সুবিধাগুলিও কমফোর্টে জোনে ক্লাস করার সুযোগকে আরো অর্থবহ করে তুলছে। সময়মতো ক্লাস করতে না পারলেও অনলাইন ক্লাসে পড়া মিস করার আশংকাকে দূর করতে পড়া, শিক্ষক এবং অন্য ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নোত্তরের কমেন্টগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

ছ। সময় বাঁচানো

অনলাইনে পড়াশোনা করতে গিয়ে ক্লাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী তাদের সুবিধামত সময়ে পাঠদান ও পাঠ গ্রহন করতে পারার ফলে সময় বাঁচানো সম্ভব হয়। কেননা এতে যাতায়াত কিংবা ইউনিফর্ম পড়ে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকার চান্স নেই। ফলে অনলাইন পড়াশোনায় সময় বাঁচানোর সুযোগ সবচেয়ে বেশি থাকে।

শিক্ষার্থীদের অল্প সময়ে অনেক শ্রেণি কার্যক্রম বা বাড়ির কাজ করার জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দরকার। দরকার সময়। এক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস বাড়তি সময় বাঁচিয়ে পড়াশোনার সময়কে নিশ্চিত করতে পেরেছে।

জ। নিয়মানুবর্তিতা শিখতে পারা

অনলাইন ক্লাসে যেহেতু সময় মতো মিটিং লিংকে জয়েন হতে হয় সেহেতু শিক্ষার্থীরা নিয়মানুবর্তিতা শিখতে পারার মতো দারুণ সুযোগ বা সুবিধা উপভোগ করতে পারছে।

শুধু নিয়মানুবর্তিতাই নয়! অনলাইন পড়াশোনা একজন শিক্ষার্থীর যোগাযোগ দক্ষতা, প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা ও অন্যান্য দক্ষতাকেও নিশ্চিত করছে। এই দক্ষতাগুলিও কিন্তু নিয়মানুবর্তিতা শিখতে পারার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। অনেকগুলি দক্ষতা একসাথে চর্চায় রাখতে শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলা অনুযায়ী সময় দেওয়ার ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠে।

ইতি কথা

আমাদের কেবল অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণ করার কিংবা অনলাইন পড়াশোনার অপ্রয়োজনীয় দিক নিয়েই পড়ে থাকলেই হবে না। এর সুযোগ-সুবিধাগুলিকেও উপভোগ করতে জানতে হবে। তবেই প্রযুক্তি নিজেই আমাদের কাছে আশীর্বাদ হিসেবে ধরা দিবে।