ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে

সময়টা এখন বড্ড ডিজিটালাইজড হয়ে উঠেছে। সুতরাং ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ে ছাত্রদের অবহিত করতে না পারলে সময়ের সাথে হুমকির মুখে পড়বে শিক্ষার্থীদের তথ্য। এক্ষেত্রে শিক্ষকেরা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। কেননা একজন শিশু পরিবারের পরেই শিক্ষকের উপর সবচেয়ে বেশি ভরসা করতে পছন্দ করে। আর এই ভরসার স্থল থেকে যদি শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাজনিত কোনো টিপস, সমাধান পায় তাতে তো কোনো ক্ষতি নেই।

সুতরাং আজ আমরা জানবো ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষক কি কি অবদান রাখতে পারে বা কোন কোন বিষয়টির ব্যাপারে একজন শিক্ষার্থীকে দক্ষ করে তোলা প্রয়োজন।

ইন্টারনেট নিরাপত্তা কি?

সাইবার অপরাধী, গোপন পর্যবেক্ষক, ইন্টারনেটের কালো ছায়া ইত্যাদি থেকে নিজেকে এবং নিজের ডিভাইস, ডিজিটাল তথ্যকে নিরাপদে রাখাই হলো ইন্টারনেট নিরাপত্তা। শিশুদেরকে যেকোনও ধরনের ক্ষতি থেকে বাইরে রাখতে বিশেষ করে ইন্টারনেটের দিক দিয়ে নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন টিপস এই ইন্টারনেট নিরাপত্তার মূল আলোচ্য বিষয়। কিভাবে ইন্টারনেটকে একজন শিক্ষার্থী নিরাপদে ব্যবহার করতে পারে তা শেখাতে একজন শিক্ষক শুধুমাত্র কয়েকটি স্টেপ ফলো করেই সুবিধা পেতে পারে।

এক্ষেত্রে একজন শিক্ষককে অবশ্যই অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার কিংবা অন্যান্য সফটওয়্যার সম্পর্কে টুকটাক ধারণা রাখতে হবে। যদিও এটিতে কিন্তু কোনো লস নেই। কেননা একজন শিক্ষক এবং ডিজিটাল যুগের হোমোস্যাপিয়েন্স হিসেবে ইন্টারনেট নিরাপত্তা সম্পর্কে জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ বলে।

ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা

ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষকেরা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। এই পর্যায়ে সবার আগে শিক্ষককে এবং পরবর্তীতে তা শিক্ষার্থীদের মাঝে যেসব পয়েন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে সে-সব পয়েন্ট সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। মোটামুটি নিচের যে কয়েকটি পয়েন্ট রয়েছে সেই কয়েকটি পয়েন্ট সম্পর্কে ধারণা রাখলেই একজন শিক্ষক খুব সহজে একজন শিক্ষার্থীকে ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করতে সক্ষম হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি কি কি হতে পারে।

ডিজিটাল নাগরিকত্ব

সবার আগে একজন শিক্ষার্থীকে বোঝাতে হবে ডিজিটাল নাগরিকত্ব সম্পর্কে। এটি মূলত ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এখন হয়তো অভিযোগ করে বসবে এই ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গেলে ইন্টারনেট নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে! হ্যাঁ! করা যাবে!

কেননা একজন শিক্ষার্থী ঠিক যখনই ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝতে পারবে, ইন্টারনেটের সুবিধা সম্পর্কে জানবে, ইন্টারনেটের ভালো দিকগুলির কদর বুঝতে পারে ঠিক তখনই সে ইন্টারনেট নিরাপত্তা সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করবে। যা পরবর্তীতে সচেতনতা হিসেবে তাদের মনে দাগ কাটতে সক্ষম হবে।

অনলাইন সুরক্ষা

অনলাইন সুরক্ষার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষককে অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার, ই-মেইল চুরির ইস্যু ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে। বিশেষ করে নিজেকে নিরাপদ রাখতে অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করার বিষয়টিকে তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা ডিভাইস অনেকটা নিরাপদ কর্ণারে চলে আসবে। কেননা এই অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারগুলিতে শতকরা ৯০ শতাংশ হুমকি মোকাবেলার সক্ষমতা নিয়ে তৈরি করা হয়। ফলে কিছু অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে অ্যান্টি-ভাইরাস কিনে নিয়ে তা ব্যবহার করে অন্ততপক্ষে কাউকে ঠকতে হবে না। মোটকথা লাভ ব্যাতীত লস হবে না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

একটা সময় পর শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে অনুমতি প্রদান করতে হয়। এক্ষেত্রে অপরিচিত বন্ধু-বান্ধবকে প্রাধান্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতে হবে। একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীকে বোঝাতে হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে থাকা অপরিচিত বন্ধু-বান্ধব এবং অপ্রয়োজনীয় কন্টেন্ট আদৌ প্রয়োজন কিনা! পাশাপাশি দিনের বেশিরভাগ সময় নষ্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়ে থাকা কতটা যৌক্তিক এবং তা আদৌ স্বাস্থ্যের উপর কোনো প্রভাব ফেলছে কিনা!

ডিজিটাল হয়রানি

একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল হয়রানি সম্পর্কেও সচেতন করতে হবে। আজকাল শিশুরা গেইম রিলেটেড বিভিন্ন মানি ডিলে নিজেকে জড়িয়ে ডিজিটাল হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মানহানি কন্টেন্ট তৈরির প্রবণতাও বাড়ছে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল হয়রানির প্রভাব কিন্তু পরবর্তীতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। সুতরাং ডিজিটাল হয়রানি সম্পর্কে সচেতনতা আপনার শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করুন।

নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিতকরণ

এবার জানবো নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কি কি বিষয়ে সচেতন করা উচিত।

  1. সবসময় অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার কিংবা অন্যান্য সফটওয়্যার আপডেট রাখা।
  2. ডিভাইসে অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
  3. বিভিন্ন ধরনের ফাইল, লিংক প্রবেশে সতর্কতা অবলম্বন করা।
  4. বাজে সাইটে আপনার মেইল এবং পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা
  5. ইউটিউব কিড অ্যাপ ব্যবহার করা।

শিক্ষক অভিভাকের করণীয়

ইন্টারনেট নিরাপত্তা কার্যকর করতে শিক্ষক অভিভাকের করণীয় সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত। কেবল শিক্ষার্থী একাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষক অভিভাকের সহযোগিতারও দরকার আছে।

শিক্ষক অভিভাকের উচিত শিশুকে ইন্টারনেটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আচরণ করতে শেখানো। পাশাপাশি হুটহাট ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের মনেও বিরূপ প্রভাব ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ইন্টারনেট নিরাপত্তা বজায় রাখতে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ‘কানেক্ট সেফটি সাইট’ নামক সাইটটি ব্যবহারে অভস্ত হতে হবে। পাশাপাশি শিশুদেরকে গুগলের ইউটিউব কিড অ্যাপ ব্যবহার করতে দেওয়ার ব্যাপারটি তো থাকছেই!