আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা মুখ্য বা কেন্দ্রবিন্দু পয়েন্ট হয়ে উঠায় সময়ের সাথে সাথে পাল্টেছে শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল। ডিজিটাল যুগের পরশে সময় পাল্টানোর কারণে ঠিক পুরনো দিনের সেই শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল আর আজকাল খুব একটা কাজে আসে না। ফলে দরকার আধুনিক এবং টেকনিক্যাল এমন কিছু শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল যা স্মার্টলি কোনো একজন শিক্ষার্থীর মাঝে যেকোনো পাঠ সহজেই তুলে ধরতে পারবে।
শিখন শেখানো পদ্ধতি কি?
অংশগ্রহণ, অভিনয়, বিতর্ক, গল্প বলা, পর্যবেক্ষণ, প্রজেক্ট, শিক্ষা ভ্রমণ কিংবা বক্তৃতা, আলোচনার সাহায্যে বা যে পদ্ধতিতে কোনো শিক্ষার্থীদের কাছে একটি পাঠের সম্পর্কে আলোচনায় করা হয় তখন সেই পদ্ধতিই হয়ে উঠে একটি শিখন শেখানো পদ্ধতি।
তবে আজকাল আমরা মুখস্থনির্ভর ও ফলাফলকেন্দ্রিক শিখন শেখানো পদ্ধতির সাথে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। যা একেবারেই ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক। এক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষক এবং শিক্ষক ব্যবস্থাকে এমনভাবে ঠিকঠাক করতে হবে যাতে শিক্ষা শুধু বইয়ে সীমিত না থাকে। বরং শিক্ষার্থীরা যেনো সেই শিক্ষাকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা ও তুলনা করতে সক্ষম হয়।
শিখন শেখানো কৌশল সমূহ কি কি?
প্রতিটি কাজকে যখন আপনি একটি নির্দিষ্ট কৌশলের সাহায্যে করা চেষ্টা করবেন তখন সেই কাজটি হয়ে উঠবে আরো অর্থবহ। শিখন শেখানোর কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও ঠিক এই বিবেচনা প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে আমাদের শিখন শেখানো কৌশল সমূহ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। চলুন জেনে শিখন শেখানোর ক্ষেত্রে কি কি কৌশল সমূহ মেনে চললে দ্রুত তা কার্যকর হবে।
- পাঠদানের সময় প্রতিটি শিক্ষককেই সকল শিক্ষার্থীর প্রতি সমান দৃষ্টি রাখতে হবে।
- মনে রাখতে হবে শিক্ষার্থীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলেই তাদের কাছ থেকে দ্রুত পড়া আদায় করা সম্ভব হবে।
- যতক্ষণ পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত শেখানোর কার্যক্রমকে চালিয়ে যাওয়ার মন-মানসিকতা থাকতে হবে।
- নিজের কাজ নিজেকে মূল্যায়ণ করতে দিয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যাওয়ার গতি নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে তারা কতটুকু এগুতে পারছে।
সুষ্ঠু শিক্ষাদান পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি?
কিছুক্ষণ পূর্বে তো জানলাম শিখন শেখানো কৌশল সমূহ সম্পর্কে। এবার আমাদের সুষ্ঠু শিক্ষাদান পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি হতে পারে সে-সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। কেননা শিখন শেখানো কৌশলের প্রয়োজন পড়ে কেবল শিক্ষা কার্যক্রমকে চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে। কিন্তু সুষ্ঠু শিক্ষাদান পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে না জানলে শিক্ষার্থীদের মাঝে সুষ্ঠু শিক্ষা-বন্ঠন অসম্ভব। চলুন জেনে নিই সুষ্ঠু শিক্ষাদান পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি হতে পারে।
ক। প্রতিটি ক্লাসে রুঢ় আচরন পরিহার করে সব সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে হাস্যোজ্বল আবেশ ছড়াতে হবে।
খ। যেকোনো পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীর সাথে সহনশীল আচরন করতে জানতে হবে।
গ। শিক্ষার্থীরা কেনো আপনার পাঠদান রিসিভ করতে সক্ষম হচ্ছে না তা খুঁজে বের করতে হবে।
ঘ। মাঝেমধ্যে তাদের বিভিন্ন এক্সট্রা স্কিলকে ফোকাস করে প্রশংসা করার মন-মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
ঙ। শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদানের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসে টেকনিক্যালি তা সামাল দেওয়া চেষ্টা করতে হবে।
চ। চেষ্টা করতে হবে ক্লাসে যেনো সংশ্লিষ্ট আনন্দদায়ক পাঠ উপকরন ব্যবহার করা হয়।
শিক্ষক কেন্দ্রিক পদ্ধতি কি?
এবার আমাদের জানা উচিত শিক্ষক কেন্দ্রিক পদ্ধতি কি টেকনিক বা এটি দ্বারা কি বোঝানো হয়। মূলত শিক্ষক-কেন্দ্রিক পদ্ধতি হলো এমন একটি পদ্বতি যেখানে শ্রেণিকক্ষের কার্যকলাপ সেই ক্লাসে থাকা শিক্ষককে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে।
শিক্ষক কেন্দ্রিক পদ্ধতি একটি বেশ কার্যকরী মডেল। যা শিক্ষার্থীদের সাফল্যের একটি সম্ভাবনাময় উৎস হিসেবে ধরে নেই শিক্ষাবিদেরা। একটি শিক্ষক কেন্দ্রিক পদ্ধতি ফোকাস করা ক্লাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে একজন শিক্ষকের উপর। ফলে ক্লাস শান্ত করার মতো কঠিন কাজটি খুব সহজেই সেরে ফেলা যায়।
শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিখন-শেখানো পদ্ধতি কি?
শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা এবং যোগাযোগ দক্ষতা উভয়ের সাহায্য যে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেই কার্যক্রমকেই শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিখন-শেখানো পদ্ধতি বলা হয়।
এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা যেহেতু ক্লাস চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা বিষয়ক আলোচনায় একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেহেতু তাদের নিজস্ব শিক্ষায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে। যা শিক্ষার্থীদের মাঝে থাকা নেতৃত্বগুণসহ বিভিন্ন গুণকে আরো অর্থবহ করে তুলতে সাহায্য করে।
সার্থক শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের বিবেচ্য দিকগুলি কি কি?
শিক্ষক যে সকল কৌশল ব্যবহার করে একটি ক্লাসকে অর্থবহ করে তুলতে পারে সে-সকল কৌশলের দিকে প্রতিটি শিক্ষককেই আরো বেশি পরিমাণ ফোকাস করতে হবে। ফলে এই প্রক্রিয়াটি পরবর্তীতে সার্থক শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকের ভুমিকাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। সুতরাং এবার চলুন জেনে নিই সার্থক শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের বিবেচ্য দিকগুলি কি কি হতে পারে সে সম্পর্কে।
- শিক্ষার্থীদের মাঝে শিখন সঞ্চালনের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নতুনভাবে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা বারবার অনুশীলন করার তাগিদ দিতে হবে।
- মুখস্তবিদ্যাকে ছুঁড়ে ফেলে সৃজনশীলতার দিকে মনোযোগী হতে হবে। ফলে প্রশ্ন আনকমন পড়লেও কিংবা যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে সমাধান না পেলেও সেই সৃজনশীলতার গুণে যেকোনো রাস্তা খুঁজে পেতে সহজ হবে।
- শিক্ষার্থীদের মাঝে থাকা পূর্বের জ্ঞান, দক্ষতার সাথে সংযোগ স্থাপন করে নতুন কিছু পাঠ যুক্ত করতে হবে।
- শিক্ষার্থীদের মাঝে শেখার উপায় ও গতির মধ্যে পার্থক্য থাকায় সেদিক দিয়েও শিক্ষককে সময় দিতে হবে।
ইতি কথা
পাঠের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সঠিক পদ্ধতি ও কৌশল নির্বাচন করতে পারলে প্রতিটি ক্লাসই হবে অর্থবহ এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীই নিয়মিত পাঠ রপ্ত করতে সক্ষম হবে। আজ এতোটুকুই। শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কিত আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।